Posts

Showing posts from November, 2022
 মানুষের সুদৃঢ় সংকল্পই তাকে মহান করে তোলে। সুদৃঢ় সংকল্প বলেই অতি সাধারণ মানুষও অসাধারণত্বের পর্যায়ে উন্নীত হতে পারে। তাই লক্ষ্যে পৌঁছবার জন্যে যদি তোমার বজ্রকঠোর সংকল্প থাকে তবে তুমিও একদিন মহান হবে। মনে রেখো এই বজ্রকঠোর সংকল্প ব্যতিরেকে জীবনে মহৎ কোন কিছুই লাভ করা যায় না।  -- শ্রী শ্রী আনন্দমূর্ত্তি (আনন্দ বচনামৃতম্, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৪৬)
 সমাজে যারা পাপী --- যারা অন্যের ক্ষতি করছে, তাদের বেশীর ভাগই শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী। যারা অশিক্ষিত তারা সহজ সরল হয়। তাদের দ্বারা সমাজে খুব কমই ক্ষতি হয়। তাই যারা শিক্ষিত হয়ে বুদ্ধির অপপ্রয়োগ করে তাদের আমি বলেছি Polished Satan --- মার্জিত শয়তান। এদের বেশবাস খুব সুন্দর, কথাবার্তা সুন্দর, কিন্তু ভেতরটা নোংরা। সাধারণ মানুষের মধ্যে এ ধরণের কম দেখা যায়। -- শ্রী শ্রী আনন্দমূর্ত্তি  (আনন্দবচনামৃতম, চতুর্দশ, পঞ্চদশ, ষোড়শ খণ্ড, পৃঃ ১৫৭) 
 এখন এই সেবার যথার্থ স্বরূপটা কী? পরমপুরুষের সৃষ্ট জগতের সেবা করাই সত্যিকারের সেবা। আমরা বাস্তব জগতে লক্ষ্য করি যখন কোন অভিভাবক দেখেন যে কেউ তাদের পুত্র-কন্যার সেবা করছে তখন তারা সেই সেবকের প্রতি সন্তুষ্ট হন। অনুরূপভাবে পরমপুরুষের সৃষ্ট জীবজগতের, বিশেষ করে মানুষের সেবা করাই পরমপুরুষকে সন্তুষ্ট করার সব চেয়ে সহজ উপায়। অতীতে তুমি কী ছিলে, কী করেছিলে সে সব কথা বেমালুম ভূলে গিয়ে এই শুভ মূহুর্ত থেকে মানবতার সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করো। পরমপুরুষ তাতে সন্তুষ্ট হবেন আর পরম পুরুষের সেই সন্তোষেই নিহিত রয়েছে মানব জীবনের পরমা সম্প্রাপ্তির চাবিকাঠি।  -- শ্রী শ্রী আনন্দমূর্ত্তি  (আনন্দ বচনামৃতম্, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৫৩)
 আমি চাই তোমরা উত্তম শ্রেণীর মানুষ হও। তোমরা সর্বদাই লক্ষের কথা চিন্তা করো। সব সময় নিজেদের আদর্শের দিকে লক্ষ্য রেখো। আর এইভাবে আধ্যাত্মিক প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের নীতিকে, নিজের আদর্শকে কঠোরভাবে মেনে চলো।  -- শ্রী শ্রী আনন্দমূর্ত্তি (আনন্দ বচনামৃতম্, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৩৬)
 আনন্দমার্গ দর্শন অনুযায়ী স্বর্গ বলে কিছু নেই। সুতরাং তোমরা কখনো কাউকে অসহায় বলে ভাবতে দেবেনা। পরম পুরুষ স্বর্গ ও নরক (যদি কোথাও থাকে) সর্বত্র আছেন। কাজেই তুমি কখনো একলা নও। তোমরা কখনো অসহায় মানসিকতাকে প্রৎসাহিত করবে না। পরমপুরুষ সদা সর্বদা তোমার সঙ্গে আছেন। শুধু তাই নয়, তিনি সর্বদাই তোমাকে ভালোবাসেন। তাই তুমি কোন প্রকার হীনমন্যতাকে প্রশ্রয় দিও না। সেই পরম পুরুষকেই নিজের জীবনের একমাত্র ধ্যেয় করে নাও, আর তাকে জেনে মুক্তি লাভ করো।  -- শ্রী শ্রী আনন্দমূর্ত্তি (আনন্দ বচনামৃতম্, ১ম খণ্ড, পৃঃ ১৮)
 ভক্ত সব সময় বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কাজ করে। জ্ঞানী করে কী? --- না, ধর্মশাস্ত্রের বা তর্ক শাস্ত্রের হাজার সমস্যা নিয়ে অযথা মাথা ঘামায়। কিন্তু ভক্ত, ধর্মশাস্ত্রের সারাংশ আত্মসাৎ করে। ভক্ত জেনে বুঝে পরমপুরুষের শরণ নেয়। যদি পরমপুরুষকে ধরি একটা জাহাজ....একটা প্রকাণ্ড ৰড় জাহাজ, ভক্ত করে কী? --- না, সে সেই প্রকাণ্ড জাহাজরূপী পবমপুকষে চেপে বসে ও নিশ্চিন্ত নিরুদ্ধেগে এই ভবসমুদ্র পার হয়ে যায়। (আনন্দ বচনামৃতম্, ১ম খণ্ড, পৃঃ ১২)
 প্রণিপাত, পরিপ্রশ্ন ও সেবা -- এই তিনটি তত্ত্বকে মেনে চললে মানুষের  আধ্যাত্মিক প্রগতি হবেই। এছাড়া অন্য কোন কিছু তোমার উপকারে আসবে না। মনে রেখো, অতি স্বল্পকালের জন্যেই তুমি এই পৃথিবীতে এসেছ। তাই তোমার সময় ও সুযোগের পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করো, মনের মধ্যে যথার্থ সেবার মনোভাব পোষণ করে জগতের সেবা করে যাও; জাগতিক মানসিক ও আধ্যাত্মিক জীবনের সকল তরে সর্বাত্মক সেবার. কাজ চালিয়ে যাও। (আনন্দ বচনামৃতম্, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৮)
 যদি সত্যি সত্যি জগতের সেবা করতে চাও তবে পরমপুরুষের পাদমূলে আত্মসমর্পণ করতেই হবে। অর্থাৎ সেই শাশ্বত সত্তা পরমপুরুষের কাছে আত্মসমর্পণ করাই হ'ল প্রণিপাত। এই সৃষ্ট জগতের সত্যিকারের মালিক হলেন পরমপুরুষ। এখানে যা কিছু কর্মধারা সবই তার। আমরা সেই পরমপুরুষের মাধ্যম মাত্র। আমাকে যে কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যদি সেই কাজটা আমি না করি তিনি অন্যকে দিয়ে তা করিয়ে নেবেন। তাই কোন কাজ করার আগে আমাকে অতি অবশ্যই এই ভাবনা নিতে হবে যে, পরমপুরুষ কৃপা করে আমার মাধ্যমে তা করিয়ে নিচ্ছেন।  (আনন্দ বচনামৃতম্, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৭)
 মানুষ, মনে রেখো পরম পুরুষ তোমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু। কোন অবস্থাতেই তুমি একলা নও। পরম পুরুষ কখনো তোমার দুঃখ-বিপদে উদাসীন থাকতে পারেন না। তিনি সবসময় তোমার ব্যথা-বেদনা অনুভব করেন। তার নির্দেশ মত কাজ করে যাও, আর তাতেই তুমি যাবতীয় কষ্ট-যন্ত্রণা থেকে পরিত্রাণ পাবে।  (আনন্দ বচনামৃতম্, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৬)
 সেই পরম পুরুষ তোমার পরম মিত্র। কোন অবস্থাতেই তুমি একলা নও। তোমার দুর্ভোগ দেখে তিনি কখনো নিরপেক্ষ বা উদাসীন থাকতে পারেন না। কাজেই তারই ইচ্ছানুযায়ী এগিয়ে চলো। তাতেই তোমার সমস্ত দুঃখ কষ্টের অবসান হবে৷  (আনন্দ বচনামৃতম্, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৫)
 মনে রেখো, যেখানে ভক্তি সেখানেই পরমাত্মা। মনে রেখো যারা জ্ঞানী, বারা তার্কিক, তাদের পক্ষে ধর্মের পথ হ'ল ক্ষুরধার তুল্য। কিন্তু যারা সাধক, যারা ভক্ত তাদের পক্ষে সে পথ কুসুমাস্তীর্ণ। তাই ভক্তির দ্বারাই যখন পরমপুরুষ লভ্য তখন ভক্তিমান সাধক পরমপুরুষকে পাবেই। তোমরা সাধক, তোমরা ভক্তির পথে চলছ, জয় তোমাদের হবেই।  (পাটনা, ৬ই আগষ্ট, ১৯৭৮।  আনন্দ বচনামৃতম্, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৩)
 .....  তবুও নিয়ন্ত্রকের প্রয়োজন জড় জগতেও রয়েছে, আর খুব বেশি রকমেরই রয়েছে। কারণ এই জড়জগতেই পশুবৃত্তি ক্ষ্যাপা কুকুরের মতই অন্যের মুখের গ্রাস কেড়ে নেয়। এই জড়জগতেই ভগমা-প্রেষিত হয়ে মানুষ দেহধারী জীব বিধবার একমাত্র সন্তানকে আছড়ে মারে। এই জড়জগতেই অর্থগৃধ্নু পিশাচেরা সরল-খজু-একতাহীন মানুষদের তিলে তিলে শুকিয়ে মারে। এই জড়জগতেই সৰল দুর্বলের জিহ্বা উৎপাটিত করে তার মুখের ভাষা কেড়ে নেয়...তার প্রাণের আকুতিকে ভাষায় রূপ দেবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে। তাই এই জড়জগতের জন্যে কঠোর শাস্ত্রের প্রয়োজন। এই শান্ত্র যে কেবল সব সময়েই বিশেষ ধরণের পুস্তকাকারে হবে এমন কোন কথা নেই। একজন শুভঙ্কর ভাবদৃপ্ত মানুষই এই ধরণের ক্ষেত্রে পুস্তকরূপী শাস্ত্রের চেয়ে বেশী কাজ করতে পারে। (নমঃ শিবায় শান্তায়। পৃঃ ১৩১) 
 শাসনাৎ তারয়েৎ যস্তু সঃ শাস্ত্রঃ পরিকীর্তিতঃ। শাস্ত্ররূপী পুস্তকের পরিবর্তে যদি কোন শুভঙ্কর মানুষ শাসনের দ্বারা সংরচনা রক্ষা করতে চায়, তবে তাকে শাস্ত্রের মতই শুভঙ্কর হতে হবে। অর্থাৎ যেখানে শুভাশুভের প্রশ্ন সেখানে আদর্শ থেকে এক ইঞ্চিও সরব না ও অন্যকে এক ইঞ্চি সরতে-নড়তে দোব না। কে নিন্দে করবে, সংবাদপত্র কী লিখবে, অথবা ভোটপ্রাপ্তিতে কীরপ প্রতিক্রিয়া হবে সে কথা ভাবলে কল্যাণকৃৎ হওয়া যায় না।  (নমঃ শিবায় শান্তায়। পৃঃ ১৩২) 
 ইতিহাসে দেখা গেছে, যখনই মানুষ ধার্মিক, , সামাজিক, অর্থনৈতিক বা অন্য কোন ক্ষেত্রে স্পষ্ট কথা বলেছে, সন্দেহের নিরসন করেছে বা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে তখনই তার বিরুদ্ধে পাপশক্তি ষড়যন্ত্র করেছে, বিষ প্রয়োগ করেছে, অপপ্রচার করেছে, ক্ষেপে মরীয়া হয়ে উঠেছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে, নিষ্ঠুরভাবে আঘাতের পর আঘাত হেনেছে, কিন্তু সেই আঘাতই আবার প্রত্যাঘাত হয়ে তারই কাছে ফিরে গেছে। নিজের আঘাতের প্রত্যাঘাতেই পাপশক্তি বিনষ্ট হয়েছে। তোমরা জেনে রেখো ইতিহাসের অমোঘ বিধানে পাপশক্তিকে বিধ্বস্ত হতেই হৰে। 
 পার্বতী শিবকে জিজ্ঞেস করছেন -- সবচেয়ে উত্তম তীর্থ কোনটি? শিব বলছেন আত্মতীর্থ। কিন্তু তামসিক স্বভাবের লোকেরা আত্মতীর্থের অনুসন্ধান না করে বাইরের জগতে এক তীর্থ থেকে অন্য তীর্থে ঘুরে বেড়ায়। তামসাঃ জনাঃ মানে যারা তমোগুণের দ্বারা বা তামসিক বৃত্তির দ্বারা প্রেষিত হয়ে তীর্থের সন্ধানে স্থান থেকে স্থানান্তরে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ায়। সংস্কৃতে তীর্থ মানে সেই বিন্দু ঘা জগৎকে ছুঁয়ে রয়েছে ও যা ইহজগণৎকে পরজগতের সঙ্গে সম্মন্ধিত করে রেখেছে। সেই সংযোগ বিন্দুকে, সেই অভিন্ন বিন্দুকে বলা হয় তীর্থ। তীরস্থং ইতর্থ্যে তীর্থং। তীরস্থং মানে যে বিন্দুতে নদীর জলরেখা তটরেখাকে স্পর্শ করছে। তমোগুণী লোকেরা তীর্থের সন্ধানে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে বেড়ায়। 'আত্মতীর্থং ন জানন্তি'। তারা জানে না যে আসল তীর্থ আত্মার মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে।
 একটা মানুষ অন্যের মুখের গ্রাস কেড়ে নেবে -- এটা তো উচিত নয় সুতরাং মানুষ যাতে বিধিসম্মত ভাবে তার সমস্ত সম্পদ নিজেদের মধ্যে মিলেমিশে ভাগ করে কাজে লাগাতে পারে তার একটা ব্যবস্থার দরকার ছিল ---- যা না করার জন্য সমাজ জীবনে যে অনুপপত্তি থেকে গিয়েছিল, সেই অনুপপত্তির : জন্যেই মানুষের যত দুঃখ -কষ্ট ভোগ চলছিল। যাতে এটা না হয়, যাতে মানুষ তার মহত্তর লক্ষ্যকে চোখের সামনে রেখে জাগতিক দুঃখ-ক্লেশ ও শোক দুর করার চেষ্টা করে সেই জন্যেই প্রাউট দর্শনের সৃষ্টি হয়েছে। প্রাউট দর্শন সৃষ্টি করা ছাড়া অন্য কোন পথ ছিল না। তা যদি না করা হতো আরও হয়তো শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষের দুঃখ -ক্লেশ চলতেই থাকত। 
 অমানিশার অন্ধ তমসার পরে অরুণৌজ্জ্বল প্রভাতের আগমন যেমন অবশ্যস্তাবী ঠিক তেমনি, আমি জানি, আজকের এই অবহেলিত মানবতার শত লক্ষ ধিকার -- লাঞ্চনার পরে একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ও আসবে; যারা মানুষকে ভালবাসে, জীব জগতের কল্যাণ যারা চায়, তাদের উচিত সেই শুভ লগ্ন যাতে শীঘ্রাতিশীঘ্র আসে তার জন্যে সকল আলস্য ত্যাগ করে এই মুহূর্ত থেকে কর্মতৎপর হয়ে উঠা। 
 শান্তি সংগ্রামেরই পরিণাম। তাই বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষেরা যেন কখনো নিজেদের সংগ্রাম থেকে দূরে না রাখে। 
 মানুষ খুব অল্পদিনের জন্যই এই পৃথিবীতে আসে। আর এই অল্প সময়ের মধ্যে তাকে সব কিছু সেরে ফেলতে হয়। কাজ অনেক, কিন্তু সময় অত্যন্ত অল্প। এইজন্য বুদ্ধিমান মানুষ প্রতিটি মুহূর্ত সময়ের সদুপযোগ করে থাকে । সময়ের অপচয় মানে চরম মূর্খতা। কোনও মানুষই এই পৃথিবীতে অধিক কাল থাকে না। মানব জীবনের চরম লক্ষ্য হল পরমাস্থিতি। সেই লক্ষটা মনে রেখে সেই লক্ষের পথে চলতে চলতে মানুষকে এই পৃথিবীতে আনুষঙ্গিক অনেক কিছু করতে হয়। এইজন্য বলা হয়ে থাকে, এক হাত রাখো পরমপুরুষের চরণে, আর অন্য হাতটা দিয়ে সংসারের কাজকর্ম করে যাও। মন যেন সর্বদাই পরমপুরুষেই সমর্পিত থাকে। আর জাগতিক কাজকর্ম করার সময় মনে রাখবে যে, এই যে জাগতিক কাজকর্ম করছি, এগুলোও পরমপুরুষেরই কাজ। এই যে পৃথিবী, এটা তো পরমপুরুষেরই সৃষ্টি। তাই এই জগতের সেবা করা মানেই বিশ্বস্রষ্টার সন্তান-সন্তুতির সেবা করা। আপন সন্তানদের কেউ সেবা-শুশ্রুষা করছে দেখলে কোন মাতা-পিতা না আনন্দিত হন? তাই পরমপুরুষের সন্তানদের যে সেবা করবে, পরমপুরুষ অবশ্যই তার প্রতি সন্তুষ্ট হবেন। জাগতিক কাজকর্ম করার সময় এই কথাটা মনে রাখতে হবে যে, এই জাগতিক কাজকর্মগুলো আমার জন্য নয়। পরমপুরুষের সে...
 পরমপুরুষকে ভাবলেই পাবে। বিদ্যায় পাবে না, বুদ্ধিতে পাবে না, শক্তিতে পাবে না, গর্বেও পাবে না। তাকে পেতে হবে ভাবশক্তিতে, তাকে পেতে হবে প্রাণের আকুতিতে। তাকে পরিপূর্ণভাবে পেতে হবে আমিত্বের বিনিময়ে, নিজের সর্বস্বের বিনিময়ে। কারো কাছ থেকে কিছু পেতে গেলে তার বিনিময়ে তাকে কিছু দিতে হয়। ঘৃত-লবন-তেল-বেগুন পেতে গেলে তা পয়সার বিনিময়ে পেতে হয় । তাকে পেতে গেলে আমিত্বের বিনিময়ে পেতে হয় -- পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করতে হয় । এই পরম ভাবের সাধক প্রকৃতির উপাসক হবে না, দর্শনের চুলচেরা বিচার নিয়েও তার মাথা ঘামাবার প্রয়োজন নেই। সাধক জানে আমি যাকে চাই সে-ই সবকিছু, ভাব-অভাব সবকিছুই সেই পরমপুরুষ। 
 পুরনো সংস্কার ও প্রথার গোলাম হবে না। যা উচিৎ, যা বাঞ্চনীয় তুমি তাই করবে কেননা তুমি তো জীবিত। সেই সাধক যার মধ্যে প্রচুর প্রাণশক্তি আছে। আর সাধনা এই প্রাণশক্তিকে বাড়ানোর জন্যে। এই প্রাণশক্তি ফিজিক্যাল অর্থাৎ শারিরীক তা শরীরকে মজবুত করার জন্যে; মানসিক প্রাণশক্তিও আছে যা মনকে শক্ত করতে আর আত্মিক প্রাণশক্তিও আছে আত্মাকে দৃঢ় করতে। মানুষ সাধনা করবে নিজেকে মজবুত করার জন্যে ও অধিকতর গতিতে এগিয়ে যাওয়ার জন্যে। থেমে থাকবার জন্যে নয়। তার গতি শশ্মানের দিকে নয় পরমপুরুষের দিকে। 
 উদ্ভিদ, জীবজন্তু ও মানুষ --- সর্বপ্রকারের জড় ও চেতন সত্তার আস্তিক পরিচিতি বহন করে ধর্ম। তাই ধর্ম বিপর্যস্ত হলে বুঝতে হবে তার অস্তিত্ব বিপর্যস্ত হতে চলেছে। তাই জ্ঞানী-গুণী-চিন্তানায়ক সবাই অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়েন যখন দেখেন কোন সত্তা তার ধর্ম হারিয়ে ফেলেছে। 
 অপরাবিদ্যাও কয়েকটি স্তরে সুবিন্যস্ত। জগৎ কল্যাণার্থ মানসিক অনুপপত্তি বুঝে ব্যাপক অধ্যয়ন। তারপর সেই অধিত বিদ্যার বিচার সমর্থিত অনুশীলন। তারপর সেই অপরাবিদ্যার নিষ্কর্ষকে জগৎ কল্যানে লাগাবার পন্থা নির্ধারণ। 
 এই পরাবিদ্যাও আবার বিভিন্ন চরণে সুবিন্যস্ত। প্রথম স্তরে, মানসিক অনুপপত্তি দূরীকরণার্থ প্রয়োজন মত সর্বধরার অধ্যয়ন। দ্বিতীয় স্তর হচ্ছে অধিত বিদ্যার বর্গপ্রাপ্তি হেতু বিচারাত্মক পথ গ্রহণ ও তদনুযায়ী নিজের বহিঃকরণিক ও আন্তঃকরণিক ভাবসমূহকে নিয়ন্ত্রণ। তৃতীয় চরণে, পরিপ্রশ্নের দ্বারা এই পরাবিদ্যাভিত্তিক জীবনাদর্শকে দৃঢ়ীকরণ ও চরম স্তরে জ্ঞ-সত্ত্বায় আত্মসমর্পণ৷ 
 পরা বিদ্যা বলি তাকে যা বিশ্লেষণাত্মক অবরোহন থেকে সংশ্লেষণাত্মক অধীরোহনের দিকে যেতে যেতে আত্মজ্ঞানের স্বর্ণিম রেখায় মানুষকে পৌঁছিয়ে দেয়। যে রেখা বিদ্যা আর আত্মজ্ঞানের অভিন্ন রেখা......  যার পর থেকে শুরু হচ্ছে চিতিশক্তির সর্বানুস্যূত ভাবময় মধুলেখন। 
 আমি তোমাদের বলব কোনো অবস্থায়ই পাপের সঙ্গে হাত মিলাবে না, পাপকে সহ্য করবে না, পাপী যদি তোমার অতি নিকট জনও হয়, ঘরের  লোক ও হয় তবুও তার মুখ দেখবে না। সৎ পথে চলবে ও মানুষকে গড়ে তুলবে। সুশিক্ষিার পশুও মানুষ হয়, দেবতা হয়। আমি বলব এ কথাটা তো ঠিক। এর অতিরিক্ত আরও একটা কথা কী?---না, পাপীকে অবস্থার চাপে ফেলে তাকে ভালো হতে বাধ্য করো। দুষ্টু লোকের চারিপাশে এমন একটা প্রাচীর রচনা করো যে তার বাইরে বেরিয়ে গিয়ে সে আর পাপ না করতে পারে, তার থোঁতা মুখ ভোঁতা হয়ে যায়, চিরদিনের জন্যে তার শিক্ষা হয়ে যায়। একটা দুষ্ট লোক যদি ভালো হয়ে যায় তাতে বিশ্বমানবতার কল্যাণ, লাখ লাখ মানুষের কল্যাণ, লক্ষ লক্ষ নিপীড়িত, নির্যাতিত মানবতার কল্যাণ হবে।এইটাই মানব ধর্ম,  এইটাই প্রকৃত ভাগবত ধর্ম। তোমরা একথাটা মনে রাখবে। জয় তোমাদের হবেই।"     ---  শ্রীশ্রী আনন্দমূর্তিজী। (আনন্দ বচনামৃতম্। ঊনবিংশ খণ্ড থেকে।পৃঃ 196)
 কেবল এতটুকুই নয়, যদি দেখ, তোমরা সমাজের ভাল করছ আর পাপীরা সমাজের ক্ষতি করছে, সেক্ষেত্রে তুমি যদি দু'পা এগোও তাহ'লে তারা তো সমাজকে দু'পা পিছিয়ে নিয়ে যাবে। তাহলে তো সমাজের গড়পড়তা উন্নতি হ'ল না। এ জন্যে তোমাকে এটাও অবশ্যই দেখতে হবে যে তুমি নিজে যেমন সমাজের ভাল করছ -- করতে থাকো, সেই সঙ্গে পাপীর বিরুদ্ধে সংগ্রামও করতে থাকো যাতে সে এগোতে না পারে। সৎ কর্ম যেমন ধর্ম, যেমন পুণ্য কর্ম তেমনি অসৎ কর্মীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করাটাও সৎ কর্ম, পুণ্য কর্ম --- এ কথা কোন মতেই ভুললে চলবে না। পৃথিবীতে এমন ভাল লোক আছে যারা মানুষ হিসেবে সত্যিই ভাল কিন্তু পাপের বিরুদ্ধে লড়াই করেনা যদিও নিজেরা ব্যষ্টিগতভাবে পূণ্য করে থাকে। এই যে নিষ্ক্রিয় (Passive) পুণ্য কর্ম, এতে পৃথিবীর সত্যিকারের প্রগতি হতে পারে না। তাই তুমি পুণ্য কর্মও করবে আর সেই সঙ্গে পাপের বিরুদ্ধে লড়াইও করবে। পাপের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করাও তোমার পক্ষে অবশ্য করণীয়, সেটাও তোমার ধর্ম। 
 জন্ম জন্মান্তরের পৃঞ্জীভূত গ্লানি এক নিমিষের মধ্যে দূর হবার নয়। এজন্যে চাই দীর্ঘকালের জ্ঞানসাধনা, চাই অহৈতুকী ভক্তি, চাই অনলস কর্মসাধনা। পৃথিবী তোমার কাছ থেকে কাজ চায়, তাই জড়তার ঘোরে কৃূপমণ্ডকের মত বসে থাকলে চলবে না। উত্তিষ্ঠত জাগ্রত।
 "যখন মানুষ তার সমস্ত প্রকার ভাবনাকে অর্থাৎ তার শরীরকেন্দ্রীক, মনকেন্দ্রিক ও আধ্যাত্মিকতা কেন্দ্রিক --- এই তিন প্রকার ভাবনাকেই এক করে নিয়ে সম্পূর্ন ভাবে নিজেকে পরমপুরুষের দিকে পরিচালিত করে--এই যে সমস্ত প্রকার ভাবনাকে পরমপুরুষের দিকে চালিত করার ভাব, এইযে মহান বৃত্তি --- একেই বলে ভক্তি। এই ভক্তির দ্বারাই মানুষের জয় জয়কার হয়। এছাড়া অন্য কোন পথ নেই।" 
 দর্শনের তিনটে আয়ুধ --- বাদ, জল্প, বিতন্ডা। এদের একটি হচ্ছে যৌক্তিকতার বলে নিজেকে শক্তিশালী করা। দ্বিতীয় হচ্ছে তর্ক শক্তিতে অন্য দর্শন বা মতবাদকে পরাভূত করা। আর তৃতীয় হচ্ছে পরাভূত দর্শনের বৌদ্ধিক দুর্গকে দখল করা।  (নমঃ শিবায় শান্তায়)
 মানুষের বন্ধন কত রকমের! মুখ্যত তিন ধরনের বন্ধনের দ্বারা মানুষ বদ্ধ হয়ে রয়েছে। তারা হচ্ছে আধিভৌতিক, আধিদৈবিক ও আধ্যাত্মিক। পরমপুরুষের শরণ নিয়ে যে তার সবটুকু আস্তিত্বিক মাধুর্য তাতেই সমর্পণ করে দেয় তখনই সে ওই তিন বন্ধন থেকে আত্যন্তিকী থেকে নিবৃত্তি অর্থাৎ মোক্ষ লাভ করে।  (নমঃ শিবায় শান্তায় - পৃঃ ১৬৩) 
 মানুষের মধ্যে যে বৃত্তি গুলো জড় জাগতিক ক্ষেত্রে বিশেষভাবে কাজ করে যায় তারা হল সংখ্যায় পাঁচটি --- আহার, নিদ্রা, ভয়, মৈথুন ও ধর্মসাধনা। এদের মধ্যে পশু জীবনে রয়েছে কেবল প্রথম চারটি। এই পাঁচটি বৃত্তির একটা অদ্ভুত স্বভাব হচ্ছে এই যে এদের উৎসাহ দিলে এরা হু হু করে বেড়ে যায়, আর একটু চেষ্টা করলে, নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে গোড়ার দিকে একটু সংগ্রাম করতে হয়। এই বৃত্তি গুলোর মধ্যে প্রথম চারটি মুখ্যত জাগতিক ও গৌণ মানসিক, আর পঞ্চমটি সমভাবে জাগতিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক। মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য সর্বনিম্ন মাত্রায় প্রথম চারটির প্রয়োজন থাকে। আর পঞ্চমটি অর্থাৎ ধর্ম ভাবনার প্রয়োজন মানুষের জীবনে কোন মাত্রা বিচার করে না....... যত বেশি থাকে ততই ভালো আর।  (নমঃ শিবায় শান্তায় - পৃঃ ১৬১) 
 রাবণ মনের মধ্যে কাজ করছে, রাষ্ট্রে কাজ করছে, সমাজে কাজ করছে, সর্বত্র কাজ করছে। এ রাবনের বিরুদ্ধে অশেষ ভাবে মানুষকে সংগ্রাম করে যেতে হবে। এছাড়া পরিত্রাণের পথ নেই। সভ্যতার যত বিকাশ হচ্ছে এই রাবণরা তত মার্জিত রূপে মানুষের সর্বনাশ করে চলেছে। ইংরেজিতে এদের সম্বন্ধে বলি 'Polished Satan'' -- মার্জিত শয়তান। রাবণের রূপে থাকা রাবণকে তবু চেনা যায়, কিন্তু এই রকমের মার্জিত শয়তান রাবন কে চেনাও মুশকিল। তাই মানুষকে এই ধরনের রাক্ষসের বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্যে অতি কঠোর ভাবে প্রস্তুত হতে হবে। 
 "নাহং তিষ্টামি বৈকুণ্ঠে যোগীনাং হৃদয়ে ন চ। মদ্ভক্তা যত্র গায়ন্তি তত্র তিষ্টামি নারদ।।"  "ভক্তেরা যেখানেই কীর্তন করেন আমি সেখানেই পৌঁছে যাই”। "আমি সেখানেই পৌঁছে যাই" না ৰলে পরমপুরুষ যদি ৰলতেন "সেখানে পৌঁছতে আমি বাধ্য” তাহলে আমার মনে হয় সেটা আরও ভাল হতো।......... এখানে আমি এটাই ৰলতে চাইছি যে যাঁরা আধ্যাত্মিক উন্নতি চান তারা অধিক থেকে অধিকতর কীর্তন করুন। কীর্তনের ফলে মানুষের মন পবিত্র হয়, আর সেই মন দিয়ে সাধনা করতে হয়।...... কীর্তনের ফলে মানুষ এতখানি পবিত্র হয়ে ওঠে যে সে অনুভব করে যেন সে সবেমাত্র গঙ্গাস্নান সেরে এল। সাধকের গঙ্গাস্নান মানেই হ'ল সদা কীর্তন।  (গ্রন্থ - ভক্তিরস ও কীর্তন মহিমা)  শ্রী শ্রী আনন্দমূর্তি 
 আজকে যে বিপুল খাদ্য-সমস্যা, চিকিৎসা-সমস্যা, শিক্ষা-সমস্যা, বাসস্থানের সমস্যার আমরা সম্মুখীন হচ্ছি এর সমাধান এককভাবে আদৌ সম্ভব নয়। এর জন্যে প্রয়োজন যৌথ প্রচেষ্টা -- সংঘ-শক্তি। আর এই কারণে তোমরা মিলেমিশে 'দেবাভাগং যথা পূর্বে' নীতি অনুযায়ী সমস্যার সমাধান করতে পার। 
 চলার পথের অন্যতম পাথেয় হচ্ছে এই ব্যতিক্রম। আমরা জেন এই ব্যতিক্রমটাকে তুচ্ছ মনে না করি।......  আমাদের দেখতে হবে যে আদর্শকে সামনে ঠিক রেখে সাধারণের থেকে ব্যতিক্রম হতে হবে। বিশেষ করে যারা একটা নোতুন রাস্তা নিয়েছে, নোতুন কিছু গড়তে চলেছে ব্যতিক্রম তাদের কাছে প্রাণের মত জিনিস; ব্যতিক্রম তাদের কাছে অত্যন্ত দামী জিনিস।.....  ব্যতিক্রমদের নিয়ে এই পৃথিবীতে মিশনারী জীবনের সূত্রপাত হয়েছিল। আজও সে ব্যতিক্রমকে আরও মহিমান্বিত করে, আরও নোতুন নোতুন ছেলের দল, নোতুন নোতুন মেয়ের দল এগিয়ে চলবে, আর ক্রমশ এই ব্যতিক্রমকেই আরও বেশি মহিমান্বিত করে তুলবে। তাই এই ব্যতিক্রমরাই মানুষের ইতিহাসকে গড়ে তোলে। বাকিরা গড়ে না।  (আনন্দ বচনামৃতম্, ৭-৯ম খণ্ড, পৃঃ ৮৮)
 নিজস্ব বলতে, আপনার বলতে এই পৃথিবীতে কিছুই নেই। কেবল পরমপুরুষই আপনজন অন্য কোনো বস্তু নয়। যদি এই ভাবটা মানুষের মনে না থাকে তবে মানুষ নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে, উদর-উপস্থ জীবি হয়ে যাবে। আমার সিদ্ধান্ত হলো এই বস্তু জগতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করে পরমাত্মার দিকে গতি বা প্রবাহ বজায় রাখা।  (আনন্দ বচনামৃতম্, ৭-৯ম খণ্ড, পৃঃ ৮৭)
 যে পুষ্টিমার্গ ধরে চলেছে তার উন্নতি হবেই। সে একদিন পরমপুরুষের অতি নিকটে এসে যাবে। বৈষ্ণবীয় গুঢ় তত্ত্বে ভাগবৎ ধর্মে এই যে তিনটে পথ অর্থাৎ সামান্যা ভক্তি, গৌণা ভক্তি, মুখ্যা ভক্তি -- এই তিনটেকে বৈষ্ণবীয় আদর্শ অনুযায়ী ব্রজভাব, গোপীভাব আর রাধা ভাব এই তিনটি স্তরে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। এই মুখ্যা ভক্তির দ্বারা মানুষ পরমপুরুষের সান্নিধ্য লাভ করে৷ আর যে মানুষ পুষ্টিমার্গ দিয়ে না যাচ্ছে তাকে বলা হয় রৌরব মার্গ। 
 এই যে মানুষের মধ্যে, জীবের মধ্যে সামান্য ভক্তি রয়েছে এটাকে আরও উন্নীত করে আরও বাড়িয়ে তুলে মানুষকে এগিয়ে চলতে হয়। মানুষ যখন সামান্যা ভক্তিকে গৌণা ভক্তিতে রূপান্তরিত করে তাকে পুষ্টিমার্গ বলে। এই পুষ্টিমার্গের দ্বারা মানুষ গৌণা ভক্তিকে মুখ্যা ভক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারে। 
 যারা সুষুম্নাকাণ্ডের পথ ধরে সহস্রারের দিকে, পরমশিবের দিকে এগিয়ে গেছেন, আর তারা ফেরেন নি। আর তারা ফেরবার নয়। তোমাদের সবাইকে বলছি, তোমরা সাধনা করে যাও। শেষ পর্যন্ত পরমপুরুষে মিলেমিশে এক হয়ে যাবে --- চির প্রশান্তি লাভ করবে। এইটাই মানব জীবনের চরম তথা পরম লক্ষ্য। 
 সাধনা করতে করতে যার পরমপুরুষের প্রতি আন্তরিক প্রেম জাগে, তখন আর তার পৃথক অস্তিত্ব থাকে না। সে মিলেমিশে এক হয়ে যায়। 
 তোমরা সার্থক সাধনার দ্বারা যেমন যেমন অন্তর্লোকে এগিয়ে চলবে সঙ্গে সঙ্গে দুঃস্থ মানবতার সেবাও করে চলবে। আর তোমাদের সেই ত্যাগ-তিতিক্ষা-সাধনা ও সেবায় পরমপুরুষও প্রীত হবেন। 
 দীক্ষা নেবার পর হয় কী, সে মানুষ যখন তার ইস্টের দিকে তাকিয়ে থাকে, সে কোন কিছুতেই বিচলিত হয়না। কোন পাপ আর তাকে বাঁধতে পারে না। যে পাপের ফলটা মানুষ একদিন ভোগ করতই ---  সেটা তাড়াতাড়ি ক্ষয় হয়ে যায়। নূতন পাপ বড় একটা তৈরী হয় না। আর মানুষ অত্যল্প কালের মধ্যেই লক্ষ্যে পৌছে যায়। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নিয়ে চললে লক্ষ্যে এক জীবিনেই লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে। এটাই জীবন। আনন্দমার্গীরা যাতে এই জীবন পায় সেই চেষ্টাতেই আমি ছিলুম, আছি ও থাকবো।  -- শ্রী শ্রী আনন্দমূর্ত্তি
 যারা খাঁটি ভক্ত তারা বিদ্বান হতেও পারেন, নাও হতে পারেন, উচ্চশিক্ষিত হতেও পারেন, নাও হতে পারেন, কিন্তু তারা যদি কীর্তন করেন তাহলে তারা মানসিক ক্ষেত্রে পরমপুরুষের সেবা অবশ্যই করতে পারবেন। 
 মানুষ! তুমি ওঙ্কারের পথ ধরে সুক্ষ্মত্বের দিকে এগিয়ে চল, ছুটো না তুমি আপাতমধুর তমোগুণী মরীচিকার দিকে। সত্ত্বগুণে প্রতিষ্ঠিত হয়ে, তারপর ব্রহ্মত্বে লীন হও। ওঙ্কার যেখান থেকে এসেছে, সেখানে গিয়ে পৌঁছাও। সাধনায়, নিষ্ঠায় জাগিয়ে তোল নিজের সুপ্ত মনুষ্যত্বকে, উদ্বোধন কর দেবত্বের মনীষাকে,আর সেই সাধনালব্ধ শুচিশুভ্র দেবত্বকে বিলিয়ে দাও ব্রাহ্মী মহিমার অখণ্ড শ্রোতে। অর্জন করো সেই পরমাস্থিতি, যার জন্যে অনাদি কাল থেকে তুমি অনেক কষ্টে এগিয়ে এসে আজ  মানষ বলে পরিচয় দেবার সুযোগ পেয়েছ। 
  "কখনও কারও ধর্মবিশ্বাসে আঘাত দিও না। তাকে ধীরে ধীরে যুক্তি দিয়ে বোঝাবে। যদি আঘাত দাও, বুঝবে সে আঘাত তুমি আনন্দমার্গকেই দিলে।” 
 যেখানে ভাষাগত শোষণ চলছে, সেখানে সেই শোষণকারী ভাষার বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাতে হবে। মানসিক.জগতে যদি কেউ তোমাকে শোষণ করে, তোমাকে হেয় করার চেষ্টা করে, সেক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে তোমাকে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। মানসিক ক্ষেত্রে তোমার নৈতিক অধিকার যে হরণ করতে চায় তার বিরুদ্ধেও তোমাকে সংগ্রাম করতে হবে। আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে তুমি তোমার পরম পিতার কাছে এগিয়ে যেতে চাও কিন্তু দুনিয়ার কোন বিশেষ শক্তি যদি তোমার আধ্যাত্মিক প্রগতিকে অবরুদ্ধ করতে চায়, তোমার আধ্যাত্মিক উন্নতি ও প্রগতির পথে ৰাধা সৃষ্টি করতে চায়, তার বিরুদ্ধেও তোমাকে সংগ্রাম করতে হবে। 
 জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সামাজিক, অর্থনৈতিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক সকল ক্ষেত্রে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যেখানে দরিদ্রের ওপর শোষণ চলছে সেখানে শোষকের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ঘোষণা করতে হবে। যেখানে মানুষের বিরুদ্ধে ব্যাপক শোষণ চলছে সেখানে শোষকের বিরুদ্ধে সংগ্রাম অবশ্যই করতে হবে। 
 "সমানি বো. আকৃতিঃ সমানা হৃদয়ানি বঃ।" মিলেমিশে প্রতিটি কাজ করবে। তোমাদের পক্ষে কোন কাজই জটিল নয়, কোন কাজই দুরূহ নয়। হাসতে হাসতে সহজভাবে পৃথিবীর সমস্ত সমস্যার সমাধান করতে করতে এগিয়ে চলো। তোমাদের জয় অবশ্যস্তাবী। জয় তো তোমাদের করায়ত্ত। মানুষ সৎ কর্ম করলে পরমপুরুষও তার সঙ্গে থাকেন। সে অবস্থায় পরমপুরুষকে বলবারও প্রয়োজন নেই যে “হে পরমপুরুষ, তুমি আমাকে আরও শক্তি দাও”, কেননা পরমপুরুষ যখন সঙ্গে রয়েছেন তখন শক্তি অবশ্যই তিনি দেবেন। শক্তি তো তিনি দিয়েই চলেছেন। তাই বলি এগিয়ে চলো, 'যুদ্ধস্ব বিগতজ্বরঃ,। 
 যুগ পরিবর্তিত হয়ে চলেছে। তোমরা সকলেই সর্বান্তকরণে সদ্ বিপ্র সমাজ গড়তে ঝাঁপিয়ে পড়ো। দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে থেমে থেকো না বা কোন অবস্থাতেই প্রতিষ্ঠার জন্যে ভীত হয়ো না। জয় তোমাদের হবেই হবে। 
 প্রণিপাত, পরিপ্রশ্ন ও সেবা -- এই তিনটি তত্ত্বকে মেনে চললে মানুষের আধ্যাত্মিক প্রগতি হবেই। এছাড়া অন্য কোন কিছু তোমার উপকারে আসবে না। মনে রেখো, অতি স্বল্পকালের জন্যেই তুমি এই পৃথিবীতে এসেছ। তাই তোমার সময় ও সুযোগের পুরোপুরি সদ্ ব্যবহার করো, মনের মধ্যে যথার্থ সেবার মনোভাব পোষণ করে জগতের সেবা করে যাও; জীগতিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক জীবনের সকল স্তরে সর্বাত্বক সেবার কাজ চালিয়ে যাও। . 
 প্রত্যেক বস্তুর নিজের নিজের ধর্ম, নিজস্ব স্বাভাবিক লক্ষন আছে। সেই লক্ষণ দেখেই মানুষ সংশ্লিষ্ট বস্তুর সঙ্গে পরিচিত হয়, তার নামকরণ করে। প্রত্যেক সত্ত্বার, প্রত্যেক জীবের নিজের নিজের ধর্মে অটুট থাকা শ্রেয়স্কর। 
 সকল অবস্থাতেই তোমাদের ধর্মকে সর্বাগ্রে স্থান দিতে হবে। তাকে প্রাধান্য দিতে হবে। যিনি ধর্মকে সব কিছুর উর্দ্ধে স্থান দেন, তার জয় অনিবার্ধ। কোন পরিস্থিতিতেই তার পরাজয় হবে না। এযাবৎ তার পরাজয় কখনও হয়নি, হয় না, ও কস্মিনকালেও হবে না। 
 নে রাখবে, মজবুৎ সমাজগুরু তৈরী করতে হবে। সমাজগুরুর অর্থই.হ'ল শিক্ষক। এই জন্যে শিক্ষা জগতে দোষ-ত্রুটির দূরীকরণ ও শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের জন্যে আমরা আনন্দমার্গে শিক্ষার ওপর এত জোর দিয়ে থাকি। সমাজগুরু যদি সমাজের রক্ষায় অসমর্থ হন, তাহলে সদ্ বিপ্রকে সেই দায়িত্ব নিতে হয়। সদ্ বিপ্ররাও যদি সমাজ-সমস্যা সামলাতে না পারেন তখন স্বয়ং পরমপুরুষকেই পাঞ্চভৌতিক আধার নিয়ে ধরাধামে আবির্ভূত হতে হয়। তোমাদের কাজ হ'ল, সমাজগুরু, সদ্ বিপ্র ও পরমপুরুষের এই যৌথ পুণ্য কর্মে দেহে মনে পূর্ণ সহযোগিতা করা। এটাই তোমাদের ধর্ম। 
 আমি তোমাদের এই একটা কথাই বলব, ব্যষ্টিগত জীবনে পাপচিন্তাকে তোমরা কখনও বর্জনীয় স্তর ছেড়ে দন্ডনীয় স্তরে নামতেই দিও না। এর বাইরে কিছু ভাববেই না।  -- শ্রী শ্রী আনন্দমূর্ত্তি
 জ্ঞানী হলে কোনো লাভ নেই। ততক্ষণ পর্যস্তই জ্ঞানের উপযোগিতা যতক্ষণ ভক্তির উদয় হচ্ছে না। যেমন ধর, তোমরা পাতার ওপর রেখে লাড্ডু, কচুরি ইত্যাদি খাও --- এটা হ'ল খাওয়ার ক্রিয়া-কর্ম, আর খাওয়ার যে আনন্দ সেটা ভক্তি। একবার ভক্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে অর্থাৎ ভোজন আত্মস্থ করে তৃপ্ত হয়ে গেলে তখন জ্ঞানের এঁঠো পাতা কুড়াদানিতে ফেলার মত হয়ে যায়। যতক্ষণ না ভক্তি জাগছে, জ্ঞানের কিছুটা প্রয়োজন আছে। তাই তোমরা বুদ্ধিমান হও, ভক্ত হও, জ্ঞানের জঞ্জালে ফেঁসে গিয়ে সময় নষ্ট করো না।  -- শ্রী শ্রী আনন্দমূর্ত্তি
 ভক্তের লক্ষণ হ'ল পরমপুরুষের প্রতি প্রেম। কেউ পণ্ডিত, কেউ ধনী, সে ভক্ত হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। বাস্তবে প্রয়োজন শুধু পরমপুরুষে প্রেম। মনের সমস্ত ভাবনাকে বিষ্ণুর প্রতি চালিয়ে দাও, হৃদয় নির্মল কর --- ব্যস, ভেবে নাও কাজ হয়ে গেছে।  -- শ্রী শ্রী আনন্দমূর্ত্তি
 ভক্তের আকর্ষণ কেবল পরমপুরুষের প্রতি। তাদের ক্ষেত্রে অন্যান্য সব খাদ্য নীরস। তা এই ধরনের ভক্ত যেখানে আমার কীর্তন করে আমি অবশ্যই সেখানে পৌছে যাই। বাস্তবে, আমাকে সেখানে পৌছতে হয়। -- শ্রী শ্রী আনন্দমূর্ত্তি
 প্রতিটি জীব অমৃতের সন্তান। তোমার জন্ম অমৃতত্ব থেকে আর গতি অমৃতত্ত্বের দিকেই। তাই বিচলিত হবার, ভয় পাবার বা চিন্তা করবার কোনো কারণ নেই। কারও এমন চিন্তা করা উচিত নয় যে তার জীবন ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। জীবন লাভ করেছ সার্থকতার জন্যেই। নিজের জীবনকে ব্যর্থ বা সার্থক করা তোমারই হাতে। সংসারের সবচেয়ে বৃহৎ সত্তা তোমার সঙ্গে রয়েছেন, আর তোমাকে সবচেয়ে বেশী ভালোও বাসেন; তাহলে নিরাশ হবে কেন!  -- শ্রী শ্রী আনন্দমূর্ত্তি
 বুদ্ধিমান মানুষ সৎ কাজ করবার আগে দেখে নেবে, যে কাজটি করছে সে কাজ শ্রেয়সম্মত না প্রেয়সম্মত। যদি শ্রেয়সম্মত হয়, তাহলে দ্বিগুণ শক্তির সঙ্গে, অধিকতর শক্তির সঙ্গে, পরিশ্রমের সঙ্গে সেই কাজ কর, তা করবার জন্য সর্বতোভাবে লেগে যাও। যদি দেখ কোন কাজ প্রেয়সম্মত অর্থাৎ প্রেয়াভিমুখী, সে কাজ থেকে নিজেকে তো দুরে রাখবেই, অন্যকেও দুরে রাখবার চেষ্টা করবে। আর যে তোমার কথা শুনবে না, তাকে জোরপূর্বক রুখ্ বার চেষ্টা করবে কেননা সমাজের কল্যানের জন্য পাপীকে পাপ থেকে দূরে রাখার প্রয়াস করা তোমার কর্তব্য।  -- শ্রী শ্রী আনন্দমূর্ত্তি
 খাবার, শোবার বা স্নান করবার সময় যদি না পাওয়া যায়, কিন্তু দুবেলা সাধনা ঠিক করতে হবে। তোমরা এটা বুঝে গেলে? সাধনা করা অতি আবশ্যক।  -- শ্রী শ্রী আনন্দমূর্ত্তি
 পরিস্থিতির চাপে পড়ে কখনো আত্মসমর্পণ করা উচিত নয়। সামনে যদি বিরাট পাহাড় বাধাস্বরূপে দাঁড়িয়ে থাকে তবে তার সঙ্গে সংগ্রামের পথ বের করে নেওয়াই অগ্রগতির লক্ষণ।  -- শ্রী শ্রী আনন্দমূর্ত্তি
 কখনো কোন প্রকারের অন্যায়, কোন প্রকারের পাপ কোন অবস্থাতেই সমর্থন করবে না। যে কেউ হোক না কেন পতি-পুত্র বা অন্য কারোরই অন্যায়কে সমর্থন করবে না। 
 সংগ্রামের মাধ্যমেই বিকাশ হয়। প্রগতির সময় বিরোধী শক্তির পক্ষ থেকে বাধার সৃষ্টি করা হয়। তারা অগ্রগতিকে রুদ্ধ করে দিতে চায়; ফলস্বরূপ দুই শক্তির মধ্যে শুরু হয়ে যায় সংগ্রাম। এই অবস্থাতেই সাধক অধিক শক্তি প্রয়োগ করে পরিণামভূত শক্তিকে অনুরূপ করে নিয়ে অগ্রগতি বজায় রাখতে পারে। এই পরিণামভূতা শক্তিই হল জীবন। যেখানে সংঘর্ষ নেই সেখানে মানুষ অজান্তেই মৃত্যুর দিকে চলে যেতে থাকে।  -- শ্রী শ্রী আনন্দমূর্ত্তি
 মানুষের মন যখন মৃত অবস্থায় পৌঁছে যায় তখন সে অন্ধবিশ্বাসের শিকার হয়ে পড়ে। যদি সে জাগতিক ক্ষেত্রে পরাজিত হয়ে যায় তখনও অন্ধ বিশ্বাসের দ্বারা সে গ্রস্থ হয়ে পড়বে।  -- শ্রী শ্রী আনন্দমূর্ত্তি
 ৰলা হয়ে থাকে, বস্তুতান্ত্রিক জগতে সংঘটিত সমস্ত অপরাধের মূলীভুত কারণ হচ্ছে মিথ্যা-- "Falsehood is the noumenal cause of all phenomenal crimes” তাই যে যতই ধর্মের ভাগ করুক না কেন, যতই পূজো-পাঠ গোবর-গঙ্গাজল নিয়ে মাতামাতি করুক না কেন, যতই তীর্থস্থানে বেড়াতে বা নেড়াতে যাক্‌ না কেন, সত্যনিষ্ঠ যদি সে না হয় তবে ধর্ম তার ত্রিসীমানায় থাকতে পারে না। তাই শিব স্পষ্ট ভাষায় ৰলেছেন, “ধর্ম সঃ ন যত্র ন সত্যমস্তি”।  -- শ্রী শ্রী আনন্দমূর্ত্তি
 অভ্যাসকে দূর করতে কিছুটা কষ্ট করতে হয়। কিন্তু স্বভাবে পরিবর্তন আনতে গেলে দীর্ঘকালীন প্রয়াসের প্রয়োজন ঘটে।  -- শ্রী শ্রী আনন্দমূর্ত্তি
 এই সত্যের ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে ধর্মের বহুপল্লবিত সংবৃদ্ধি ও বিস্তৃতি। অর্থাৎ সত্যকে যে মানছে না, ঋতকেও যে মানছে না, যে ব্যষ্টিগত স্বার্থে বা স্বভাবগত ভাবে মিথ্যাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে, ধর্ম তার কাছে থাকতেই পারে না। যে মানুষ ব্যষ্টিগত স্বার্থে মিথ্যা ৰলে সে পশু-পাথীর চেয়েও তো বটেই, উদ্ভিদের চেয়েও নিম্নমানের সত্তা। যে স্বভাবগতভাবে মিথ্যা ৰলে, বুঝতে হৰে, সে দীর্ঘকাল ধরে অবাধে অথবা স্বচেষ্টায় মিথ্যা ভাষণের অভ্যাস করেছিল। আর সেই অভ্যাস আজ স্বভাব হয়ে দাড়িয়েছে।  -- শ্রী শ্রী আনন্দমূর্ত্তি
 ব্যষ্টিগত স্বার্থে বা স্বভাবগত ভাবে অসত্য ৰলে তথাকথিত প্রাগ্রসর মানুষেরা। কিন্তু যেসব মানুষ ধর্মনিষ্ঠ তারা অনগ্রসর মানুষদের মত সত্যনিষ্ঠ তো বটেই, তার চেয়েও অনেক বেশী। যা তথ্য, যা ঘটেছে তাকে ৰলি ঋত। উদ্ভিদ জগতের মধ্যে রয়েছে এই ঋতের ভাব। অনগ্রসর সরল মানুষদের মধ্যেও রয়েছে এই ঋতের ভাবনা ও ঋতাত্মিক বিধৃতি। কিন্তু যারা ধর্মনিষ্ঠ মানুষ তারা ঋতকে আরও মেজে ঘসে, আরও সংশোধিত ভাবে তাকে জগতের কাজে লাগান। ঋত যেখানে অকল্যাণের ইশারা দেয়, ঋত যেখানে অনৃতের নিশানা দেয়, সেখানে তারা ঋতকে কল্যাণের উপযুক্ত বাহন রূপে তৈরী করে নেন। এই কল্যাণকৃৎ ঋতকে ৰলা হয় সত্য।  -- শ্রী শ্রী আনন্দমূর্ত্তি
 জগতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বৈকতাবাদকে মানতেই হবে কিন্তু মনে রাখতে হবে শান্তি এক আপেক্ষিক সত্য। পাপী যখন সাধু বা সৎ লোকের ভয়ে মাথা নিচু করে চলে তখন তাকে বলব  সাত্ত্বিকী শান্তি, আর যখন পাপী চলে মাথা উঁচু করে তখন বুঝতে হবে সমাজে চলছে তামসিক শান্তি। বিশ্বৈকতাবাদ যার ধ্যেয় সে অবশ্যই সাত্ত্বিক স্বভাবের মানুষ হবে। তাই সত্যিকারের শান্তি হচ্ছে সাত্ত্বিকী শান্তি। সে ক্ষেত্রে শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে আর যতক্ষণ পর্যন্ত এই সংগ্রামে জয়ী হতে থাকবে ততক্ষণ সমাজে থাকবে সাত্ত্বিকী শান্তি। বিভেদমূলক শক্তিকে সমূলে উৎপাটিত করতে হবে। এটা হল সংগ্রামী সাধকের সামাজিক রূপ। বৈয়ষ্টিক জীবনে তাকে মানসিক ও আধ্যাত্মিক সাধনার দ্বারা নিজের চৈত্তিক বিকাশ করে যেতে হবে, এইজন্যে তাদের সর্বদা এক হয়ে থাকতে হবে। সাধককে এইভাবে এক দৃঢ় সমাজ তৈরি করে নিতে হবে, না হলে ঠিকভাবে সংগ্রাম করা সম্ভব হবে না। -- শ্রী শ্রী আনন্দমূর্ত্তি
 সমাজ হচ্ছে মানুষের সামুহিক সংস্থা। এতে সর্বদা থাকে এক সামুহিক সংহতি। যতদিন মানুষ বিশ্বৈকতাবাদকে মেনে না নেবে ততদিন সমাজ তৈরি হতে পারে না।  -- শ্রী শ্রী আনন্দমূর্ত্তি
 বিশ্ব শান্তির জন্য একটি আদর্শ নিয়ে চলতে হবে। এতেই হবে ধর্মের প্রতিষ্ঠা। মতবাদের তারা তা কখনোই সম্ভব নয়। 
 সাধকের দেশ হচ্ছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড আর তার জাতি হচ্ছে সে জীব।  -- শ্রী শ্রী আনন্দমূর্ত্তি
 জড়বাদী দেশে মানুষের অবস্থা হারেমের নারীর মত, সে সোনার আভূষণে সর্বসজ্জিত থাকলেও বাইরে বের হতে পারবে না। তাই জড়বাদীরা কপটাচারী। -- শ্রী শ্রী আনন্দমূর্ত্তি
 দর্শনের তিনটে আয়ুধ -- বাদ, জল্প, বিতণ্ডা। এদের একটি হচ্ছে যৌক্তিকতার বলে নিজেকে শক্তিশালী করা। দ্বিতীয় হচ্ছে তর্ক শক্তিতে অন্য দর্শন বা মতবাদকে পরাভূত পরাভূত করা। আর তৃতীয় হচ্ছে পরাভূত দর্শনের বৌদ্ধিক দুর্গ কে দখল করা। -- শ্রী শ্রী আনন্দমূর্ত্তি

মানুষ! তুমি তেজস্বিতায় প্রতিষ্ঠিত হও,

 মানুষ! তুমি তেজস্বিতায় প্রতিষ্ঠিত হও, পৌরুষে প্রতিষ্ঠিত হও, বীর্যবত্তায় উদ্বোধিত হও, কারণ তোমার পথ বিপ্লবের পথ, “অতিসাবধানীর” ধরাবাধা গতানুগতিকতার পথ তোমার জন্যে নয়। বন্ধুর পথের যাত্রী তুমি, দুর্গম পথের যাত্রী তুমি, মার্গের পতাকা উরে তুলে মাথা উঁচু করে বুকে ফুলিয়ে তোমাকে এগিয়ে যেতে হবে। থমকে দাঁড়াবার, পিছনে তাকাবার অবকাশ তোমার নেই।  -- শ্রী শ্রী আনন্দমূর্ত্তি

তুমি অনন্ত সুখের পিয়াসী

 তুমি অনন্ত সুখের পিয়াসী, অনন্ত জীবনের প্রয়াসী, তুমি তোমার বক্ষের উত্তাপে, শিরা-ধমণীর শোণিত ধারায়, হৃৎপিণ্ডের স্পন্দনে, সেই অনন্ত জীবনের সঙ্গেই সংযুক্ত হ'য়ে রয়েছ, অনন্ত যৌবনের বাণী অহরহঃ শুণে চলেছ। তুমি কি জড়ের মত যজ্ঞহীন, কর্মহীন অবস্থায় থাকবার কথা ভাবতে পার? তোমার যা পরমাপ্রাপ্তি, পরমাসিদ্ধি, সেই চরম অবস্থাতেও তুমি থেকে যাবে অনন্ত জ্ঞানশক্তিতে চির-সমাহিত। -- শ্রী শ্রী আনন্দমূর্ত্তি

যজ্ঞ

....... তাই বলি, যতক্ষণ তোমার অস্তিত্ব আছে ততক্ষণ যজ্ঞ করে” যেতেই হবে, আর যে মুহুর্তে তুমি যজ্ঞ সম্পাদনে পরাঞ্জুখ হবে বা অপারগ হবে সে মুহূর্তেই তোমাকে অন্ধকারের আড়ালে সরে যেতে হবে। তুমি তা, পার না। নিজের সত্তাকে বৃহৎ থেকে বৃহত্তর, মহৎ থেকে মহত্তরের দিকে নিয়ে যাওয়াই তোমার ধর্ম। নিজেকে অন্ধকার-লোকে হারিয়ে ফেলা তোমার সত্ত্বা-ধর্ম বিরোধী।  -- শ্রী শ্রী আনন্দমূর্ত্তি

Genuine love for Parama Purusa

 So those persons who do not possess genuine love for Parama Purusa, who are averse to spiritual practice, who only read books and scrounge for bits of intellectual information, who go to listen to the instructions of religious teachers, cannot do any really good work in the world. And worst of all, those people, hankering after others’ praise, become worse than ordinary people.

O human beings, you are fortunate

 O human beings, you are fortunate. The clarion call of the Universal has reached you. Not only has the call come, but you are hearing it and it is vibrating in every cell of your body. Will you now lie in the comer of your house as an inert being and waste your time, clinging to old skeletons and bemoaning them? The Supreme Being is calling you in the roar of the ocean, in the thunder of the clouds, in the speed of lightning, in the meteor’s flaming fires. Nothing good will come from idleness. Get up and awaken the clouded chivalry of your dormant youth. It may be that the path is not strewn with flowers and that an inferiority complex will attempt to hold fast your each advancing step, but even then you have to proceed onwards. tearing the shroud of darkness. You will tear the thick darkness of despair as you advance in the racing chariot radiant with the sun’s brilliance, towards the attainment of the supreme state.